চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি বিশ্বমানের চলচ্চিত্র নির্মাণে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার জন্য যা যা সহায়তা লাগবে তা দিতে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠানে এই আশ্বাস দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সব সময় একটা কথা মনে রাখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে চাই- কোনো দিকেই আমরা পিছিয়ে থাকতে চাই না।
“আর শিল্পের দিক থেকে বিশেষ করে, চলচ্চিত্র শিল্পের দিক থেকেও আমরা চাই, আমরা যেন বিশ্বমানের চলচ্চিত্র করে এগিয়ে যেতে পারি। আর তার জন্য যা করার দরকার আমার পক্ষ থেকে সবই আমি করব।”
সব দিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চাই, আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পটাও আরও উন্নত হোক। এর জন্য ইতোমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।”
সমাজ সংস্কারে চলচ্চিত্র অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্য পড়ে আসা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “চলচ্চিত্র মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। সমাজে অনেক বার্তা পৌঁছানো যায়। অনেক কথা বলা যায়। সমাজ সংস্কারে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে এই চলচ্চিত্র।”
এক সময় মানুষ চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া শুরু করলেও আবার চলচ্চিত্রের সময় ফিরে আসছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও আধুনিক করা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি তুলে ধরার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই, আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পটা আরও আধুনিক হবে, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হবে। কারণ বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ।
“আমাদের সিনেমা তৈরি করা বা পরিবেশন সব ক্ষেত্রে আধুনিকতা আসুক। ডিজিটাল পদ্ধতি একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে যাক এবং আমরা আরও উন্নত মানের ছবি করি। যে ছবি সমাজ সংস্কারে ভালো ভুমিকা রাখবে।”
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং আমাদের যে সংগ্রাম সে চিত্রগুলি মানুষের কাছে তুলে ধরা একান্তভাবে প্রয়োজন।”
বিদেশ সফরে যাওয়া-আসার সময় উড়োজাহাজে বসে সিনেমা দেখার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দেখেছি, অনেক ভালো ছবি হয়।”
অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান তিনি।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ও তথ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ।
পুরস্কার দেওয়ার পর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরস্কার পেলেন যারা
অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য আজীবন সম্মননা দেওয়া হয়েছে ফরিদা আক্তার ববিতা ও আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে।
সেরা চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’, সেরা পরিচালক অমিতাভ রেজা, সেরা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী এবং যৌথভাবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও কুসুম শিকদার।
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ঘ্রাণ’ এবং শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে ‘জন্মসাথী’।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রাভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন আলী রাজ ও ফজলুর রহমান বাবু।
শ্রেষ্ঠ পার্শ্বচরিত্রাভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ, শ্রেষ্ঠ খল-অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম, শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আনুম রহমান খান।
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক ইমন সাহা, শ্রেষ্ঠ গায়ক ওয়াকিল আহমেদ, শ্রেষ্ঠ গায়িকা মেহের আফরোজ শাওন, শ্রেষ্ঠ সুরকার ইমন সাহা।
শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার তৌকীর আহমেদ, শ্রেষ্ঠ গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা রুবাইয়াত হোসেন, শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম।
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক ইকবাল আহসানুল কবির, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান, শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রিপন নাথ।
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জার পুরস্কার উঠেছে সাত্তার ও ফারজানা সানের হাতে, আর শ্রেষ্ঠ মেকাপম্যানের পুরস্কার পেয়েছেন মানিক।
সূত্র, বিডিনিউজ.২৪